You are currently viewing কিষেণজির যৌনজীবন:‌ বিপ্লবের মুখোশে ঢাকা নারী কমরেডদের কান্না

কিষেণজির যৌনজীবন:‌ বিপ্লবের মুখোশে ঢাকা নারী কমরেডদের কান্না

Share this post

মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও। ওরফে কিষেণজিকে নিকেশ করার পিছনে যে এক বিশেষ নামী ব্র্যান্ডের কন্ডোমের ভূমিকা ছিল সে কথা অনেকেই জানেন। কিষেণজির কন্ডোম ব্যবহারের অভ্যাস যখন ছিল, তার মানে নিয়মিত সক্রিয় যৌনজীবনও ছিল, এটাও বলাই বাহুল্য।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে জঙ্গলের মধ্যে কাদের সঙ্গে যৌনতায় মাততেন কিষেণজি? কারা ছিলেন তাঁর সঙ্গিনী?
কিষেণজির প্রথম প্রেমিকা কল্পনা মাইতি:‌ ২০১০ সালের মার্চ মাসে সিআইডি–র হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল বাংলার মাওবাদী আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ ভেঙ্কটেশ্বর রেড্ডি ওরফে তেলুগু দীপক। জেরায় সে স্বীকার করে, বিপ্লবের বুলি আসলে ভেক। দলের মহিলা সদস্যদের সঙ্গে যৌনতায় মাতেন কিষেণজি। কিষেণজির প্রেমিকাদের কথা বলতে গেলে সবার আগে নাম আসবে কল্পনা মাইতি ওরফে অনুর। এই অনু ছিলেন কিষেণজির সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের সঙ্গিনী। শোনা যায়, যতই নারীসঙ্গ করুন না কেন এই অনুর সঙ্গে কিষেণজির একটা মানসিক সম্পর্কও তৈরি হয়েছিল। আর সেটা একা কিষেণজির দিক থেকে নয়। অনুর দিক থেকেও। অথচ মাওবাদীদের দলে নাম লেখানোর পরে অনুর প্রথম সম্পর্ক তৈরি হয় আকাশ ওরফে অসীম মণ্ডলের সঙ্গে। রটে যায়, তাঁদের নাকি বিয়েও হয়েছে। ২০১০ সালে এসটিএফের হাতে ধরা পড়ার পরে বোঝা যায়, বিয়ে অবধি সম্পর্ক গড়ায়নি। এরই মধ্যে অসীমের বদলে কিষেণজির ঘনিষ্ঠ হন অনু। এমনকী, খড়্গপুরে হোটেলে সময়ও কাটিয়েছেন তাঁরা।
ধীরে ধীরে শুধু শরীর কিংবা প্রেমই নয়, কিষেণজির সঙ্গে রীতিমতো শ্রদ্ধার সম্পর্ক গড়ে ওঠে অনুর। কিষেণজি সম্পর্কে রীতিমতো স্পর্শকাতর ছিলেন তিনি। এই আবেগকেই জেরার সময় কাজে লাগাতেন এসটিএফের আধিকারিকরা। ইচ্ছা করে খোঁচা মেরে কিষেণজি সম্পর্কে নানা কটূ কথা বলতেন। তাতে অনু ক্ষিপ্ত হয়ে নাকি বলতেন, ‘আপনাদের কোনও অধিকার নেই কিষেণজি সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলার। জানেন কি উনি কত বড় নেতা? জীবনে কত আত্মত্যাগ করেছেন।’ আবার এ–ও বলতেন, ‘এত সহজে আমাকে আমার এত বছরের আদর্শ থেকে টলাবেন?’ অনু যতই একনিষ্ঠ প্রেমিকা হন, কিষেণজি কিন্তু ততটা ‘কমিটেড’ ছিলেন না।
দ্বিতীয় প্রেমিকা শকুন্তলা:‌ অনুর পরে কিষেণজির জীবনে এলেন শকুন্তলা। কে এই শকুন্তলা? শকুন্তলার নাম প্রথম সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। শিলদায় যৌথ বাহিনীর শিবিরে হামলা চালিয়ে ২৪ জন জওয়ানকে হত্যা করা হয়। হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন অনু এবং শকুন্তলা। প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস চলে শকুন্তলার সঙ্গে কিষেণজির সম্পর্ক।
শিলদার হামলাকারীদের দিনের পর দিন প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছিলেন কিষেণজিরই নির্দেশে। শকুন্তলার সঙ্গে কিষেণজির সম্পর্ক, গোয়েন্দা-তথ্য অনুযায়ী, চলেছিল মাস চার-পাঁচেক। এবার প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন এত ঘনঘন সঙ্গিনী বদল করতেন কিষেণজি? ব্যক্তিগত তথ্য জেনে যাওয়ার ভয়? না শুধু সেটা নয়। আর এক প্রাক্তন মাওবাদী শোভা মান্ডি ওরফে উমা ওরফে শিখার কথা এখানে বলতে হবে।
শোভা মান্ডির স্বীকারোক্তি:‌ বাঁকুড়ার সারেঙ্গা এলাকার খয়েরপাহাড়ি গ্রামের মেয়ে শোভা ২০০৩-এ মাওবাদীদের দলে যোগ দেন। ধীরে ধীরে নেত্রী হয়ে ওঠেন। পরে ২০১০ সালের আগস্টে আত্মসমর্পণ করেন। জেরায় তিনি জানিয়েছিলেন মাওবাদীদের দলে বহু মহিলা সদস্যই ছিলেন নেতাদের যৌনদাসী। তাঁকে নিজেকেও একাধিকবার ধর্ষিতা হতে হয়েছে। বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে যৌনতাও করতে হয়েছে। যাঁদের মধ্যে অন্যতম আকাশ। হ্যাঁ, এই আকাশের সঙ্গেই আবার অনুর সম্পর্ক ছিল। পরে একটি বই লেখেন শোভা, যার নাম ছিল ‘এক মাওবাদী কি ডায়েরি’। সেখানে খুল্লমখুল্লা শোভা ফাঁস করেছেন মাওবাদী শিবিরে ওয়াইফ সোয়াপিং, যৌন অত্যাচার, শ্লীলতাহানি ছিল খুবই নিয়মিত ঘটনা। এর জেরে অনেক মহিলা গর্ভবতীও হয়ে পড়তেন। সেক্ষেত্রে জোর করে গর্ভপাত করানো হতো। কিষেণজি এসব ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন। তাই তাঁর পছন্দ ছিল নামী ব্র্যান্ডের কন্ডোম। তাঁর লালসা থেকে ছাড় পাওয়াও সহজ ছিল না।
জাগরী বাস্কেও ছাড় পাননি:‌ কুখ্যাত মাওবাদী নেত্রী জাগরী বাস্কে আত্মসমর্পণ করেছিলেন কিষেণজি নিকেশ হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে। তিনিও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক অফিসারের জেরায় জানিয়েছিলেন, কিষেণজির সঙ্গে দু’–তিনবার তাঁকে যৌনতা করতে হয়েছে। এরকমটা আরও অনেকের সঙ্গেই করেছেন কিষেণজি।
তেলুগু দীপকের সুরে সুর মিলিয়েই কিষেণজির যৌন লালসার কথা ফাঁস করেছিলেন বিনপুর স্কোয়্যাডের আর এক মাওবাদী সদস্য। ইনি ছিলেন বিনপুর স্কোয়্যাডের একজন মাঝারি মাপের নেতা। গ্রেফতারির পরে ঝাড়গ্রাম পুলিসের একটি সেফ হাউসে যখন এঁকে জেরা করা শুরু হয়, তখন কিছুতেই মুখ খুলছিলেন না তিনি। অফিসাররা খেয়াল করেন, ওই যুবকের সামনে কেউ ধূমপান করলে সে একটু উসখুস করছে এবং যখন কেউ তাঁর সামনে দামী সিগারেট বের করছেন, তখন লোভে চকচক করে উঠছে তাঁর চোখ। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তাঁর দিকে এক প্যাকেট কিং সাইজ সিগারেট এগিয়ে দেন অফিসাররা। সিগারেট প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে গড়গড় করে তথ্য ফাঁস করতে শুরু করেন ওই মাওবাদী যুবক। বলে ফেলে কীভাবে রাতের পর রাত তাঁবুতে মহিলা সদস্যদের সঙ্গে যৌনতায় মাততেন কিষেণজি!‌ যে কোনও দলের সঙ্গে লড়াইয়ে এঁটে উঠতে না পারলে দলের নেতার চরিত্র তুলে আক্রমণ করার রেওয়াজ এ দেশে বহুদিন ধরেই চলছে। দলের নেতার চরিত্রের দুর্বল দিক ফাঁস করে দিলে কর্মীদের মনোবলে চিড় ধরানো যায়। এবার এভাবেই পাল্টা আক্রমণ ও বিদ্রুপের রাস্তায় হাঁটা শুরু করা হল।
২০০৯ সালে অক্টোবর মাসে শালবনির পিরাকাটা এবং তার লাগোয়া কলসিভাঙা ও চাঁদরার জঙ্গলে যখন তল্লাশি অভিযান চলছে, তখন মাওবাদীদের একটি পোস্টার উদ্ধার হয়। যেখানে পুলিস ও যৌথবাহিনীকে হুঁশিয়ারি দেওয়া ছিল। শালগাছের গায়ে আটকানো ওই পোস্টারটিতে ‘ক’ অক্ষরটি একটু বিশেষ রকমের ছিল। মানে, ক–এর উপর দিকটা মূর্ধ ণ–র মতো লম্বা করে টানা। আগেই জানা ছিল, এই ভাবে ‘ক’ লেখেন মাওবাদীদের এক জনই— রাজ্য কমিটির এক দাপুটে সদস্য। এঁর স্ত্রী আবার মাওবাদীদের সংগঠনের নেত্রী হিসেবে পরিচিত। জবাবে ওই পোস্টারের নিচে পাতার রস দিয়ে লিখে দেওয়া হয়, তোমার স্ত্রীকে তো গোটা স্কোয়াড ভোগ করছে। তুমি সেখানে কী করতে পারলে যে, আমাদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছ? বলাই বাহুল্য, এই নেত্রীই ছিলেন শকুন্তলার পরে কিষেণজির শয্যাসঙ্গিনী। ২০১১ সালের আগে অবশ্য কিষেণজির সঙ্গে এই নেত্রীর বিশেষ নৈকট্য ছিল না। ২০১১–এর মার্চে যৌথবাহিনীর হাতে ওই নেত্রীর স্বামী নিহত হন। তারপর ধীরে ধীরে ওই নেত্রীকে গ্রাস করেন কিষেণজি। এও বলা হয়, কিষেণজিকে নিকেশ করার পিছনে ওই নেত্রীর নাকি বড় হাত ছিল।
অনু, শকুন্তলা কিংবা কিষেণজির শেষ জীবনের ওই রহস্যময়ী সঙ্গিনীর তবু নাম পাওয়া যায়। হিসাব পাওয়া যায় না, বিপ্লবের আদর্শকে সামনে রেখে কত অনিচ্ছুক নারীকে ভোগ করেছেন কিষেণজি কিংবা তাঁর মতো মাও নেতারা। বিপ্লব অত্যন্ত রোম্যান্টিক ব্যাপার। বিপ্লবের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে কত কমরেডই একে অপরকে তাঁদের জীবনসঙ্গী কিংবা সঙ্গিনী হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তা বোধহয় গুণে শেষ করা যাবে না। কিন্তু বিপ্লবের পথে প্রেম আর স্রেফ শরীরী ভোগের মধ্যে পার্থক্য আছে।
দিনবদলের স্বপ্নে বুঁদ হয়ে যাঁরা মাওবাদীদের দলে যোগ দেন, তাঁরা এই অন্ধকার দিকগুলো জানেন?‌


Share this post

Leave a Reply