You are currently viewing অবনী:‌ ঠান্ডা মাথায় এক মা–কে হত্যার কাহিনী

অবনী:‌ ঠান্ডা মাথায় এক মা–কে হত্যার কাহিনী

Share this post

The greatness of a nation can be judged by the way its animals are treated.

—Mahatma Gandhi

কোথাও হয়তো লেখা নেই। তবু জানবেন, ‘‌শেরনি’‌ আসলে বেস্‌ড অন আ ট্রু স্টোরি।

লকডাউন না থাকলে এ সিনেমা কতজন হলে গিয়ে দেখতেন, সন্দেহ আছে। অন্তত আমি দেখার কথা ভাবতাম না। থ্যাঙ্কস টু লকডাউন, সিনেমাটা অ্যামাজন প্রাইমে এল। তবু এক মুহূর্তের জন্য চোখ ফেরাতে পারিনি ‘‌শেরনি’‌ থেকে।

আছেটা কী ‘‌শেরনি’‌–তে?‌ এখানে গ্ল্যামার নেই, সেক্স নেই, আইটেম নাম্বার নেই, টুইস্ট নেই, দমচাপা সাসপেন্স নেই, ধুন্ধুমার অ্যাকশন নেই, সিক্স প্যাক নেই, ক্লিভেজ নেই। বরং যা রয়েছে, তা হল, আগাগোড়া একটি মানুষখেকো বাঘিনির পিছনে তাড়া করে যাওয়া। শিকারের গল্পে বারংবার বাঘ দেখানোটাই দস্তুর। বাঘ আসবে, লাফিয়ে পড়ে মানুষ টেনে নিয়ে যাবে— এসবে টিআরপি চড়চড় ওপরে ওঠে।

এখানে মানুষখেকো বাঘের একবারের জন্যও মানুষের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য পর্যন্ত নেই।

তাহলে এমন কী আছে, যার জন্য দেখতেই হবে ‘‌শেরনি’‌?‌

১)‌ অসম্ভব মাত্রাজ্ঞান ২)‌ বিদ্যা বালন ৩)‌ রিসার্চ।

আমি ফিল্ম বিশেষজ্ঞ নই। তাই সিনেমার নানা টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে হ্যাজ নামাব না। আমি শুধু তিনবছর পিছনের কয়েকটা খবরে ফিরে যেতে চাই।

গোটা সিনেমায় যে বাঘিনিকে টি–টুয়েলভ নামে দেখানো হল, তার চরিত্রটা বানানো হয়েছে অবনীর ছায়ায়। সেই অবনী, মানুষখেকো হয়ে যাওয়ার অপরাধে যাকে মহারাষ্ট্রে গুলি করে হত্যা করা হয় ২০১৮ সালে। সম্ভবত আইনি জটিলতা এড়াতেই গোটা ফিল্মে একবারও সরাসরি অবনীর নাম বলা হল না। কিন্তু যা যা ঘটেছিল অবনীর সঙ্গে,তার প্রায় সবই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হল ‘‌শেরনি’‌–তে।

মহারাষ্ট্রের নাগপুর থেকে যবতমলের দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। সেখানে রয়েছে টিপেশ্বর অভয়ারণ্য। অবনী ছিল সেই এলাকার বাসিন্দা। তিন বছরের একটু বেশি বয়স। তারই মধ্যে দুই শাবকের মা সে। বাঘ স্বভাবগতভাবে মানুষখেকো নয়। বরং মানুষকে সে এড়িয়ে চলতেই ভালবাসে। তাহলে অবনী কেন মানুষখেকো হয়ে গেল?‌ উত্তরটা জানতে গেলে চোখ রাখতে হবে যবতমলের তামার খনিগুলোর দিকে। বনাঞ্চলের গা ঘেঁষে রয়েছে তামার খনি। আর যেখানে খনি, তার খুব কাছেই কারখানাও তৈরি করতে চাইবেন শিল্পপতিরা। এটাই স্বাভাবিক। যেখানে কারখানা হবে, তার কাছে তৈরি হবে রাস্তা, সড়ক। বসবে নানা বড়বড় যন্ত্র। বাড়বে লোকসংখ্যা। গোটা এলাকাটাই গমগম করবে। খুব স্বাভাবিকভাবেই তখন জীবজন্তুরা ভয়ে নিজেদের এলাকা ছেড়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করবে। ফলে, গোটা এলাকার জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্যটাই নড়ে যাবে। তখন বাঘের খাবারও (‌অর্থাৎ, হরিণ, বাইসন, শুয়োর)‌ নিজেদের এলাকা থেকে সরে যাবে।

বাঘ তো আর খালি পেটে থাকতে পারে না। নিজে অভুক্ত থাকলেও সন্তানদের সে খালি পেটে রাখতে পারে না। অবনীও রাখতে চায়নি। ফলে সে আসতে বাধ্য হয়েছিল লোকালয়ে। প্রথমে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের গবাদি পশু শিকার করতো সে। তখন বনবিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, কয়েকটা দিন জঙ্গলের ধারেকাছে গবাদি পশু নিয়ে না যেতে। মাত্র কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলেই গবাদি পশু না পেয়ে অবনী সেখান থেকে সরে যেত। কিন্তু পশুচারণের বিকল্প জায়গা ততদিনে দখল করে নিয়েছে ফ্যাক্টরি।

অর্থাৎ, অবনী মানুষের এলাকায় ঢোকেনি। মানুষ অবনীর এলাকায় ঢুকেছিল। তার খাবারদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। ফাঁকা পেটে থাকতে বাধ্য করেছিল তাকে। ফাঁকা পেটে রাখতে বাধ্য করেছিল তার শাবকদের। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন একা অবনীই মানুষখেকো হয়ে গেল। ওই এলাকায় তো আরও বাঘ ছিল। তারা কেন মানুষখেকো হল না?‌ তারও একটা উত্তর রয়েছে। সেটা পাওয়া যাবে পরের অনুচ্ছেদের শেষ বাক্যে।

খিদে!‌ এই একটা শব্দই গ্রামবাসীদের, তাদের পোষ্য গবাদিপশুদের এবং অবনীকে এনে দাঁড় করিয়েছিল, একই জমিতে। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছিল। প্রথমে গবাদিপশু, তারপরে মানুষ মারা শুরু করে অবনী। তেরো জনের প্রাণ কাড়ে সে। তেরো সংখ্যাটা নিয়েও বিতর্ক আছে। কারণ, যখন কোনও মানুষখেকো বাঘ কাউকে মারে, তখন নিহতের শরীরে সে নিজের লালা, লোম কিংবা অন্য কোনও দেহাংশ লাগিয়ে দেয়। সেই দেহাংশের ডিএনএ পরীক্ষা করে বোঝা যায়, ওই নির্দিষ্ট বাঘটাই পরপর মানুষ মারছে কি না। অবনীর ক্ষেত্রে ১৩জনের লাশের মধ্যে ডিএনএ ম্যাচ করেছিল মাত্র ৩জনের সঙ্গে।

এবার বোঝা গেল?‌

বনদফতরের নিয়ম অনুসারে, বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কোনও বাঘকে মেরে ফেলা হল একেবারে শেষ বিকল্প। চেষ্টা করা হয়, তাকে স্বাভাবিক পরিমণ্ডলে ফিরিয়ে দেওয়ার। কখনও ক্যানেস্তারা পিটিয়ে কিংবা পটকা ফাটিয়ে খেদিয়ে, কখনও ঘুম পাড়িয়ে খাঁচায় পুরে কোর এরিয়ায় (‌সহজ ভাষায় বলতে গেলে ঘন জঙ্গলে)‌ ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অবনীর ক্ষেত্রে সেটা হয়নি।

তাহলে কী হয়েছিল অবনীর ক্ষেত্রে?‌

সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল অবনীকে মেরে ফেলতে হবে। সারাদেশের মানুষ পিটিশন করে আপত্তি জানান। তাতে কাজ হয়নি। আর অবনীকে মারার জন্য ডাকা হয় আসগর আলিকে। কে এই আসগর আলি?‌ তিনি হায়দরাবাদের শিকারি শফত আলি খানের পুত্র। মানেকা গান্ধী বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, পশুশিকারের অনুমোদনই নেই আসগরের। তাতে অবশ্য অবনীকে হত্যা আটকানো যায়নি। আর পুত্রের ‘‌সাফল্যে’‌ গর্বিত শফত বলেছিলেন, ‘‌আমি রাজপরিবারের সন্তান। শিকার করাকে সামাজিক কাজ বলে মনে করি। আমার ছেলে যেভাবে বাঘটাকে মেরেছে। তাতে আমি গর্বিত।’‌

এখানেই শেষ নয়। অবনী আদৌ মানুষখেকো ছিল কি না, সেটা নিয়ে রীতিমতো সন্দেহপ্রকাশ করেছিলেন এইচএস প্রয়াগ। কর্নাটকের বনবিভাগের প্রাক্তন এই আধিকারিক একজন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞও বটে। তিনি ইকোনমিক টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‌আমি শফাতের সঙ্গে অনেকবার কাজ করেছি। ও যেখানে দায়িত্ব নেয়, সেখানে কোনও প্রাণীকেই জীবন্ত ধরার সম্ভাবনা থাকে না। যখন আমি অপারেশন অবনীর সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের প্রশ্ন করেছিলাম, কীসের ভিত্তিতে অবনীকে মানুষখেকো বলে ঘোষণা করে দেওয়া হল, তখন তারা একটাই কথা বলেছিলেন— ওপর থেকে অর্ডার দেওয়া হয়েছিল।’‌

অবনীর দেহ যখন ময়নাতদন্ত করা হয়, দেখা গিয়েছিল, বিগত পাঁচ–ছ’‌দিন ধরে সে কিছুই খায়নি। মানুষখেকো বাঘ এতদিন অভুক্ত থাকেই না। কারণ, মানুষ শিকার করা খুবই সহজ। শুধু তাই নয়, হয় খাদ্যের অভাব, না হলে কোনও শারীরিক চোট— মূলত এই দু’‌টি কারণেই কোনও বাঘ মানুষখেকো হয়। অবনীর শরীরে চোটের কোনও চিহ্ন ছিল না। তাহলে কি ধরে নিতে হবে, অবনী মানুষখেকো ছিল না?‌ ‌খেয়াল রাখতে হবে, অবনী ওই এলাকার একমাত্র বাঘ নয়। অন্য বাঘগুলিরও শিকারের অভাব হয়েছিল।‌ আর মানুষখেকো যদি অবনী হয়েই থাকে, তাহলে সেটা খাদ্যের অভাবেই হয়েছিল। খনি করে, ফ্যাক্টরি গড়ে কে কেড়ে নিল অবনীর খাদ্য?‌ কে ভেঙে দিল অরণ্যের বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক খাদ্যশৃঙ্খল?‌ কে অনাথ করে দিল দু’‌টি ১০মাস বয়সী ব্যাঘ্রশাবককে?‌ কে অবনীর মৃত্যুর জন্য দায়ী?‌

উত্তর একটাই। মানু্ষ।

ধরে নেওয়া যাক, অবনী সত্যিই মানুষখেকো হয়ে গেছিল। তাহলেও কি সে বরাবর মানুষই মেরে যেত?‌

বিনয় বর্মন (‌মধ্যপ্রদেশের বনবিভাগের প্রাক্তন ডিরেক্টর অফ চিফ কনজারভেটর)‌ তেমনটা মনে করছেন না। তিনি বলেছিলেন, ‘‌সাড়ে তিন বছর বয়স অবধি অবনী কখনও মানুষ শিকার করেনি। সন্তান হওয়ার পরে ওকে সন্তানদের স্তন্যদান করতে হতো। সেই সময়ে ওর ক্ষিদে বেড়ে গেছিল।’‌ এবং এরপরের কথাটা মর্মবিদারক। বিনয় বলছেন, ‘‌Naturally, she also required immediate nourishment for herself. This could be the reason why the tigress had killed a few villagers, as that area has low prey base’‌

অর্থাৎ, একজন স্তন্যদাত্রী মা সন্তানদের দুধ খাওয়ানোর পরে বেশি করে ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছে। তার এলাকায় তার শিকার নেই। সেটাই তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল!‌ সন্তানদের ক্ষুধানিবৃত্তির কারণে একটি মা–কে মরে যেতে হল। অনেকেরই ধারণা, যে বাঘ একবার নরমাংসের স্বাদ পায়, সে আর অন্য কোনও শিকার ধরার চেষ্টা করে না। সেই ধারণাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে বিনয় বলেছেন, ‘‌Once those compulsions were over, she would have returned to hunting animals as before’‌

‌স্তন্যদানের পরে বেশি ক্ষিদে পাওয়ার সমস্যাটা মিটে গেলে (‌অর্থাৎ, বাচ্চারা একটু বড় হলে যখন তাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর দরকার পড়তো না)‌ অবনী ফের মানুষ খাওয়া বন্ধ করে দিত।

কীভাবে মারা হয়েছিল অবনীকে?‌ জোগাড় করে আনা হয়েছিল পুরুষ বাঘের মূত্র। সেটা ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল একটি এলাকায়। যাতে ওই গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে অবনী আসে। এও কি একধরনের প্রেমের ফাঁদ?‌ বলা যেতেই পারে কিন্তু। নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে ফাঁদে ফেলে খাঁচায় পোরার চেষ্টা করা হবে বাঘকে। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে ঘুমপাড়ানি গুলি করে অজ্ঞান করতে হবে। এনডিটিভির রিপোর্ট বলছে, পোস্টমর্টেম করে দেখা যায়, অবনীকে গুলি করা হয়েছিল পিছন থেকে। এবং পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে। কেন?‌ না, যে ঘুমপাড়ানি গুলি তাকে করা হয়েছিল, সেটায় নাকি প্রাথমিকভাবে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেও মাঝে তার জ্ঞান ফিরে আসে এবং আসগরকে সে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। কেন ঘুমপাড়নি গুলি কাজ করল না?‌ সে নিয়ে বনবিভাগের কর্তাদের কোনও উত্তর নেই। সেটা নিয়ে তদন্ত হল না কেন, সেটারও কোনও জবাব নেই।

বলা হয়, অবনীকে যখন টোপ দিয়ে খাঁচায় পোরার চেষ্টা করা হয়, সে নাকি ফাঁদে পা দেয়নি। তখন কিন্তু পুরুষ বাঘের মূত্র ব্যবহার করা হয়নি। তাহলে কেন ফের টোপের চারপাশে পুরুষ বাঘের মূত্র ছড়ানো হল না, সেটার উত্তর অবশ্য একটা রয়েছে। কারণ, এভাবে মূত্র ব্যবহার করাটা বনবিভাগের আইনবিরুদ্ধ!‌ তবে কেন শিকারের সময় মূত্র ব্যবহার করা হল, সেটা নিয়েও কিন্তু আজ অবধি কোনও তদন্ত করেনি বনবিভাগ। এটাও ছেড়ে দিন। নিয়মমাফিক তো প্ল্যান ছিল, অবনীকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে তার অচৈতন্য দেহ খাঁচায় ভরে আনা হবে। তাহলে কেন হুডখোলা জিপে করে যাওয়া হল তাকে ধরতে?‌ সুপ্রিম কোর্টে যখন মামলাটা ওঠে, ঠিক এই প্রশ্নটাই তুলেছিলেন আইনজীবী সঙ্গীতা ডোগার। তাঁর দাবি, বাঘিনিকে ধরাই যদি প্রাথমিক উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে হুডখোলা জিপগাড়ি নিয়ে জঙ্গলের গভীরে কেন যাওয়া হয়েছিল? সেক্ষেত্রে তো মানুষের প্রাণের কোনও সুরক্ষাই থাকে না! আর এমন কী ওষুধ দেওয়া হল, যাতে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে জেগে ওঠে অবনী?‌ কেউ কেউ একথাও বলেন, আগেই গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছিল অবনীকে। ঘুমপাড়ানি গুলিটা তার পরে ছোড়া হয়।

ক্ষুধা জীবের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। দোষ অবনীর নয়। দোষ তেমন বাঘের পেটে যাওয়া কিংবা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকা গ্রামবাসীদেরও নয়। কিন্তু যে মা–কে একটু উদ্যোগ নিলেই কোর এরিয়ায় ঠেলে দেওয়া যেত, যেখানে সে খাবার পাবে, খাঁচায় ভরে সেই এলাকায় ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আর একটু সতর্ক হওয়া গেল না?‌ অবনীর দুই সন্তানকে প্রাথমিকভাবে ধরার পরে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদেরও যে তাদের মায়ের মতোই মেরে ফেলা হয়নি, সেজন্য তারা মানুষকে ধন্যবাদ দেবে নাকি মা–কে মেরে ফেলার জন্য ঘৃণা— সেকথা অবশ্য জানার উপায় নেই। বাঘেরা তো আর কথা বলতে পারে না


Share this post

Leave a Reply