You are currently viewing টাইটানিক নাকি আসলে কোনওদিন ডোবেইনি!‌

টাইটানিক নাকি আসলে কোনওদিন ডোবেইনি!‌

Share this post

বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে আলোচিত ট্র্যাজেডি বা দুর্ঘটনার তালিকা যদি তৈরি করা হয়, টাইটানিকের নাম ছাড়া সেই তালিকা কখনও সম্পূর্ণ হতে পারে না। সলিলসমাধির ১১১ বছর পরেও অতিকায় এই জাহাজকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। কেন ডুবেছিল টাইটানিক?‌ উত্তরটা সকলেরই জানা, কীভাবে হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কায় তলিয়ে গিয়েছিল এই বিলাসবহুল জাহাজটি। তবে রয়েছে অন্য তত্ত্বও। সেই তত্ত্ব নিয়ে যদি কথা বলতে হয়, তাহলে তার প্রথম বাক্যটা শুনলেই নড়েচড়ে বসতে বাধ্য আপনি। হ্যাঁ, কারণ কেউ কেউ মনে করেন, টাইটানিক আসলে ডোবেইনি!‌

১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল আটলান্টিক মহাসাগরের অতলে তলিয়ে যায় টাইটানিক। মৃত্যু হয়েছিল ১৫০৩জনের। জাহাজের পুরো নাম ছিল আরএমএস টাইটানিক। এই জাহাজটা বানিয়েছিল হোয়াইট স্টার লাইন। এই সংস্থার কর্ণধার ছিলেন জেপি মর্গ্যান!‌ জাহাজের ব্যবসার পাশাপাশি ব্যাংকার হিসেবেও বেশ সুনাম ছিল মর্গ্যানের।

বিলাসবহুল প্রকাণ্ড জাহাজ হিসেবে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল টাইটানিক। তবে জেনে রাখা ভাল, ১৯০৭ সাল থেকে টাইটানিকের পাশাপাশি আরও দু’‌টি প্রায় একইরকম দেখতে ও একইরকমের সুযোগসুবিধা সম্পন্ন জাহাজ বানাচ্ছিল হোয়াইট স্টার লাইন। সেই দু’‌টির নাম অলিম্পিক এবং ব্রিটানিক। ১৯১০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রথমবার জলযাত্রায় নামে অলিম্পিক। যাতায়াতের পথেই একটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অলিম্পিক। জাহাজের গায়ে দুটো বড় ফুটো হয়ে যায়। তবে কোনও মতে তীরে ফেরে তারা। মর্গ্যানের মতো দুঁদে ব্যবসায়ী অবশ্য জাহাজের বিমা করিয়ে রাখতে ভোলেননি। কিন্তু বেঁকে বসে বিমা কোম্পানি। তারা মনে করে চালকের দোষেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল অলিম্পিক।

সময়টা খেয়াল করুন। সালটা ১৯১১–র শেষের দিক। টাইটানিক তৈরির কাজ তখন প্রায় শেষের দিকে। প্রচুর টাকা বিনিয়োগ হয়ে গিয়েছে। টাইটানিকের বিজ্ঞাপনও চলছে ফাটিয়ে।

এই অবধি যা পাওয়া যায়, সেটা ঐতিহাসিক তথ্য। সবেরই নথিপত্র রয়েছে। বাকি গল্পটা জানতে হবে কিছুটা তৎকালীন সংবাদপত্রের লেখালিখি এবং পরপর ঘটে যাওয়া কয়েকটা ঘটনা থেকে দু’‌য়ে দু’‌য়ে চার করে।

অনেকেই মনে করেন, ঠিক এইখান থেকে শুরু হয়েছিল বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় জাহাজের সলিলসমাধির ষড়যন্ত্র। অলিম্পিককে পাঠিয়ে দেওয়া হল মেরামতের জন্য। সবটাই ঘটল লোকচক্ষুর অন্তরালে। ১৯১২ সালের ৭ মার্চ হঠাৎ জানা গেল বেলফাস্ট বন্দরে মেরামতির পর নাকি সমুদ্রে বেরিয়ে গিয়েছে অলিম্পিক। এখান থেকেই শুরু হল কানাঘুষো। বলা শুরু হল, বেলফাস্ট থেকে আসলে সমুদ্রে অলিম্পিক বেরয়নি। বেরিয়েছে টাইটানিক। একইরকম দেখতে হওয়ায় কেউ ফারাকটা বুঝতে পারেনি। এরকম মনে করার কারণ দু’টো। প্রথমত অলিম্পিকে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তার সারাই করতে গেলে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করার দরকার ছিল, তার পরিমাণ বিরাট। বিমা কোম্পানি টাকা দেয়নি। এদিকে মর্গ্যান ওই পরিমাণ টাকা খরচ করবেন, এটা তাঁর কোম্পানির লোকরাই বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলেন না। দ্বিতীয়ত, যে ক্ষতি অলিম্পিকের হয়েছিল, সেটা সারিয়ে ফেলা ১৯১১–এর সেপ্টেম্বর থেকে ১৯১২–এর মার্চের মধ্যে সম্ভব নয়। ব্যাপারটা নিয়ে খবরের কাগজে রীতিমতো লেখালিখিও শুরু হল। তবে খুব বেশি সাড়া পড়ল না।

তবে যাদের ব্যাপারটায় উদ্বিগ্ন হওয়ার ছিল, তারা ঠিকই হলেন। হোয়াইট স্টার লাইনে ইস্তফা দেওয়ার হিড়িক পড়ে গেল। এদিকে এপ্রিলে যাত্রা শুরু করার কথা ছিল টাইটানিকে। দাম দিয়ে টিকিট কাটার পরেও বেশ কিছু মান্যগণ্য লোকজন সফর বাতিল করলেন। সবচেয়ে বড় কথা, টাইটানিকে যাত্রা করার কথা ছিল খোদ জেপি মর্গ্যানেরও। তিনিও যাত্রা বাতিল করলেন।

এরপরে কী হয়েছিল, সকলের জানা। ১৪ এপ্রিল মধ্যরাতে সলিলসমাধি হল টাইটানিকের। কিন্তু যেটা অনেকের জানা নেই, তা হল লন্ডন বন্দরে হোয়াইট স্টার লাইনের একটি কয়লাবাহী জাহাজ বেশ কিছুদিন ধর্মঘটের কারণে আটকে ছিল। টাইটানিক যেদিন বন্দর ছেড়ে যাত্রা শুরু করেছিল, প্রায় সেই সময়েই তিন হাজার কম্বল এবং শীতবস্ত্র নিয়ে সেই জাহাজটিকে রাতারাতি রওনা করানো হল আটলান্টিকের দিকে। ১৪ এপ্রিল আটলান্টিকের মাঝখানে হঠাৎ ইঞ্জিন বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহাজটির। কেন?‌ তাহলে কি মর্গ্যান জানতেন টাইটানিক ডুবতে চলেছে, তাই শীতবস্ত্র আর কম্বলের দরকার পড়তে পারে?‌ তারপরে সেই জাহাজ যদি বা দাঁড়িয়ে গেল, তারপরে গেলটা কোথায়?‌ কেনই বা ১৪ এপ্রিলের রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল জাহাজের ইঞ্জিন?‌

এদিকে এই অলিম্পিককে টাইটানিক আর টাইটানিককে অলিম্পিক বানিয়ে দেওয়ার তত্ত্ব যদি ঠিক হয়, তাহলে আরও একটা তথ্য জেনে নেওয়া ভাল। সেটা হচ্ছে খাতায় কলমে অলিম্পিক নামের জাহাজটি, যাকে অনেকেই আসল টাইটানিক বলে মনে করেন, মেরামতির পর (‌যদি অবশ্য আদৌ সেটার মেরামতি হয়ে থাকে বা মেরামতির দরকার পড়ে থাকে) ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত সমুদ্রের বুকে দাপিয়ে বেড়িয়েছিল। ঠিক যেমন দাপিয়ে বেড়ানোর কথা ছিল টাইটানিকের। তার পারফরমেন্স দেখে অভিজ্ঞ নাবিকরাও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। ‌

এদিকে ১৯১৪ সালে টাইটানিক তো ডুবল। ঠিক তার দু’‌বছরের মাথায় নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে দিয়ে জেপি মর্গ্যান সব দায় ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেললেন।

এখানে অবশ্য একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, সেই যদি সারাই করে ঝাঁ চকচকে বানিয়েই অলিম্পিককে টাইটানিক সাজিয়ে জলে নামানো হয়ে থাকে, তার মানে তো জাহাজের পিছনে খরচ করেইছিলেন মর্গ্যান। তাহলে নিজের খরচ করা জাহাজকে তিনি জেনেশুনে ডুবতে দেবেন কেন?‌ এরও উত্তর পাওয়া যায়। অনেকেই মনে করেন, যে জাহাজকে ‘‌আনসিঙ্কেবল’‌ অর্থাৎ যা কখনও ডুববে না বলে দাবি করা হচ্ছিল, সেই জাহাজের নির্মাতারা ভাল করেই জানতেন তাঁদের জাহাজ কোন পথে যাত্রা করবে। ইংল্যান্ড থেকে আমেরিকার ওই যাত্রাপথে যে শ’‌য়ে শ’‌য়ে হিমশৈল তাঁদের পেরতে হবে, তাও তারা জানতেন। তার মানে, হিমশৈলের ধাক্কা সামলাতে পারবে, এমনভাবেই তারা জাহাজটা বানিয়েছিলেন। তাও হিমশৈলের সঙ্গে প্রথম ধাক্কাতেই জাহাজ দু’‌টুকরো হয়ে যাওয়া একটা সত্যের দিকেই আঙুল দেখায়, তা হল, মেরামতি হয়েছিল শুধু ওপরওপর। নামকাওয়াস্তে। যেনতেনপ্রকারেণ জাহাজকে জলে নামিয়ে দেওয়াই ছিল হোয়াইট স্টার লাইনের লক্ষ্য। তারপরেও যাঁরা মানতে চান না, সামান্য জাহাজ মেরামতির কয়েকটা টাকার জন্য ১৫০০ মানুষকে জলে ডুবিয়ে মারতে পারেন কেউ?‌

জানিয়ে রাখা যাক, টাকার অঙ্কটা শুধু জাহাজ মেরামতির নয়। বরং আরও অনেক অনেকটা বেশি। আগেই বলেছি, জেপি মরগ্যান ছিলেন সেই সময়ের নামী ব্যাংকার। তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জ্যাকব এস্টর, ইসিডর স্ট্রস, বেঞ্জামিন গুগেনহাইম। এই ব্যাংকিং সেক্টরের আর একটা দাপুটে নাম ছিল সেই সময়ের রথসচাইল্ড পরিবার। ইউরোপ ও আমেরিকার ব্যাংকিং পরিষেবা সেই সময় দ্বিধাবিভক্ত ছিল ফেডারেল রিজার্ভ প্রথা নিয়ে। এই নিয়ম চালু করা নিয়ে আড়াআড়ি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় ব্যাংকিং সেক্টর। এই প্রথা চালু না হলে মুখ থুবড়ে পড়তেন মর্গ্যান ও রথসচাইল্ডরা। এদিকে জ্যাকব এস্টর, ইসিডর স্ট্রস, বেঞ্জামিন গুগেনহাইম চাননি এই প্রথা চালু হোক। অনেকেই মনে করেন টাইটানিকে এস্টর, স্ট্রস এবং গুগেনহাইমদের ভ্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় রথসচাইল্ডদের পক্ষ থেকে। যাওয়ার কথা ছিল মর্গ্যানেরও। শেষ মুহূর্তে সম্ভবত পরিকল্পিতভাবেই তিনি নিজের যাওয়া বাতিল করেন। বলাই বাহুল্য এস্টর, স্ট্রস কিংবা গুগেনহাইম— কেউই প্রাণে বাঁচেননি। ফলে ব্যাংকিং পরিষেবার রাশ পুরোটাই চলে আসে মর্গ্যান ও রথসচাইল্ডদের হাতে।

সত্যিই কি ডুবেছিল টাইটানিক?‌ নাকি আসলে সলিলসমাধি ঘটেছিল অলিম্পিকের?‌ কেন নিজের যাত্রা বাতিল করেছিলেন মর্গ্যান?‌ কোন ম্যাজিকে বা প্রায় ডুবতে বসা জাহাজ অলিম্পিক সামান্য মেরামতির পরে ২১ বছর ধরে একেবারে নতুন জাহাজের মতো ছুটে বেড়াল সমুদ্রের মধ্যে?‌

এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে যে ধ্বংসাবশেষ, তা ১১১ বছর ধরে দু’‌টুকরো হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায়  ১২,৪৬৭ ফিট গভীরে পড়ে রয়েছে।


Share this post

Leave a Reply